Skip to main content

অধর্ম

[আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়তো ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি, কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ - কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন, সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। ওঁদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে সারা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কিবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য - তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।]

 
 কি বলি বলুন তো  !এমন কিছু নতুন তো বলতে পারছি না যা আগে শোনেননি বা পড়েননি । এই নির্দিষ্ট  বিষয় নিয়ে হাজার হাজার শব্দ উচ্চারিত হয়েছে , লেখা হয়েছে । কেউ কিছু একটা লিখবে ,তার মতে , তার বিশ্বাস থেকে কিংবা বলবে- অমনি ঘাড়ে পড়বে 'চাপাতি' ! বেশ নাম ডাক হয়েছে ইদানীং এই যন্ত্রটির । কুপিয়ে দিয়ে তবেই শান্তি স্বঘোষিত ধর্ম পাহারাদারদের । কত পরিশ্রম করে খুঁজে পেতে নাম পালটে থাকা ব্লগারকে নিকেশ করো কারণ সে 'ধর্ম বিরোধী' বা আমার মতের বিপরীতে । 'পরমত সহিষ্ণুতা'! এ শব্দবন্ধ তো  সোনার পাথর বাটি ! কবে ছিলো ? কোথায়ই বা রয়েছে ?


 বীজ রয়েছে ,রয়ে গেছে ঘুমন্ত মৌলবাদের , অসহিষ্ণুতার প্রবলভাবেই সার্বজনীন । 'মৌলবাদ' বলতেই আমরা আবার  শুধুই ধর্ম জুড়ে ফেলি ! যেন আর কোথাও এর অস্তিত্ব নেই । রয়েছে প্রবল ভাবেই , রাজনৈতিক আদর্শগত  মৌলবাদ , বৌদ্ধিক মৌলবাদ , জাতীয়তাবাদী বা রাষ্ট্রবাদী  মৌলবাদ  - কবেই বা আমরা সহিষ্ণুতা দেখালাম ? খেলার মাঠ হোক আর ফেসবুকের দেওয়াল , রাজনৈতিক মিছিল হোক আর বিতর্কের আসর । হ্যাঁ সঙ্গে 'চাপাতি' থাকেনা বটে , তবে তাতে আক্রমণের হিংস্রতা কমে না ।


ঘটমান সাম্প্রতিক 'মৌলবাদী' আক্রমণের অন্যতম যে ব্লগার হত্যার বিষয় ,তার আলোচনায় উঠে আসে মহামানবদের নির্দেশিত পথ ও মত ।  এসব আমরা তো জানি , সেই কবে থেকেই , জানে যারা ব্লগারদের কোপাচ্ছে তারাও ! জানেনা এমন নয় । কিন্তু ওই ,শুধু জানাই রয়ে গেছে , জানা আর মানার মধ্যে তো কোন বাধ্য বাধকতা রাখা সম্ভব নয় ।  কোন ধর্মের কোন মহামানবই বা বলে গেছেন যে ভিন্ন মতাবলম্বীদের নিকেশ করো ! কেউ না ... 'ধর্ম ' এখানে বিষয়ই নয় আসলে , বিষয় ধর্মের ভান । সব ধর্মেই কিছু আলোক প্রাপ্ত, চিন্তাশীল মানুষ ভালো ভালো কথা বলে গেছেন , কিছু প্রভাব ফেলেছেন জনমানসে , কিছু পরিবর্তন আনতেও সক্ষম হয়েছেন অনেকেই , তার কিছু কিছু সুফল আমরা ভোগ করছি একথাও নিশ্চিত । কিন্তু নিজেদের এবং অন্যদের দাগিয়ে দিতে থাকার প্রবণতা কিন্তু ছাড়িনি কখনও !


আমাদের প্রায় সবারই 'ধর্মপরিচয়' কিন্তু জন্ম সূত্রে পাওয়া । কি অদ্ভুত তাই না !  এক মানব শিশু জন্মালো আজ , সে হয়ে গেলো মুসলমান বাচ্চা বা হিন্দু বাচ্চা এবং সে বড় হতে হতে জেনে নিলো সে মুসলমান কিংবা হিন্দু ! এবং আরও বড় হলে সে জানলো যে আর একটি শিশু যে আজ বড় হয়েছে সে আর আমি ঠিক একরকম নই কারণ সে 'অন্যধর্মী' সুতরাং  সে 'ওরা' আমরা নয় । এখানেই শুরু হয়ে যাচ্ছে ধর্মের ভান নিয়ে কারবারিদের খেলা , বিন্দু বিন্দু বিষের প্রয়োগ , মগজ ধোলাই - মৌলবাদের তো এটাই নির্মাণ পদ্ধতি । অন্য ক্ষেত্রেও সেই একই , মতাদর্শের (!) মোড়কে জিঘাংসা জিইয়ে তোলা - ওকে নিকেশ করো নাহলে তোমার অস্তিত্ব ঝুঁকির সামনে পড়বে ...অতএব ...


একজন ব্যক্তি ধর্মের নামে অপ-কার্যকলাপ অস্বীকার করছে , এর অসাড়তাকে তুলে ধরছে , ব্যাঙ্গ করছে প্রতি নিয়ত , তার স্পর্ধাকে আঘাত হানো , নিকেশ করো যাতে আরও যারা রয়ে গেছে ,যারা আফিমের নেশা থেকে কোনক্রমে নিজেরদের বাঁচাতে পেরেছে তাদের ত্রস্ত করে তোলো তবেই হবে ধর্ম রক্ষা । রক্ষা হবে ধর্মের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য ।

জিঘাংসা মানুষের সভ্যতার এক আদিম প্রবণতা , শুধু উপলক্ষ পালটে পালটে যায় .. ইতিহাস তো তাই বলছে ! ...আবার ইতিহাস এ কথাও বলছে ,বিপরীত কণ্ঠের অস্তিত্ব ছিল -আছে - থাকবে ।  এই 'অন্যস্বর' কে যতই স্তব্ধ করার  ঘৃণ্য ,কাপুরুষোচিত  প্রয়াস চলবে ততোই এই ভুবন-গ্রামের কোনো না কোনো  কোণে জেগে থাকবে স্বাধীন স্বর , অন্যস্বরেরা - কারণ অসহিষ্ণুতা, মৌলবাদ , জিঘাংসার মতোই স্বাধীন সত্তা কে কায়েম রাখা , নিজের মতামতকে উদারভাবে আগলহীন তুলে ধরাও  একরকম মানবিক প্রবণতাই !

ব্লগে এত গম্ভীর কথাবার্তা সাধারণত লিখিনা , লিখলাম আজ , লিখেই যখন ফেললাম তখন আজকের মতো যেতে যেতে বলি - চলুন না এই আমাদের জীবনে 'ধর্ম' এর ব্যাবহারিক মাত্রা ও ভূমিকা নিয়ে একটু চিন্তা করি , নিজেদের মধ্যেই সুপ্ত মৌলবাদী 'স্লিপিং শেল' টিকে চিহ্নিত করি , করে কিছু দেখাতে হলে , মোমবাতি মিছিল , সোশ্যাল নেটওয়ার্ক কাঁপানো প্রতিবাদের ঝড় নয় - আসুন ,পারলে একটি ধর্মহীন মানব শিশুর জন্মের আয়োজন করি । কারণ ধর্মের গুরুত্ব থাকবে আমাদের জীবনে , জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম পরিচয় থাকবে আর ধর্মান্ধতা থাকবে না ,  বিকৃতি থাকবে না - এ অসম্ভব ও অবাস্তব ।


...আসুন , চাপাতির ঝলসানো ক্রূরতার বিপরীতে আমরা একটি 'ধর্মহীন' শিশু রাখি ! পারবেন কি ?



অন্যান্য লেখা ঃ



Plight of secular bloggers in Bangladesh (কৌশিক দত্ত)

আহত কলম (তপব্রত ব্যানার্জি) 

আইডিয়া (অভিষেক মুখার্জি)  

আমার মহানবী ( রোহোণ কুদ্দুস) 

ঊনচল্লিশের এক এবং অন্যান্য – বাংলাদেশ প্রসঙ্গে (প্রবীরেন্দ্র চ্যাটার্জি)

অভিজিৎ রায় হত্যা প্রসঙ্গে (প্রবীরেন্দ্র চ্যাটার্জি)

আজকের খবরে অভিজিৎ মৃত (শিঞ্জিনী সেনগুপ্ত)  

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি (শিঞ্জিনী সেনগুপ্ত)

ধর্ম  (BongPen- অন্য পোস্ট)

Know that You have Won (অমৃতরূপা কাঞ্জিলাল)

ফিসফাস ( সৌরাংশু )

 ইন্দ্রনীলের ব্লগ-বক: ধর্ম ও ষাঁড়




Comments

  1. আশাটুকু তো করতে পারি প্রথম পদক্ষেপে

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিশ্চয়ই পারি ! না করাই অন্যায় হবে ...ওটাকে জিইয়ে রাখতেই হবে । ধন্যবাদ ।

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

নামকে ওয়াস্তে ...

বন্ধুর বাবার নাম ‘মোনালিসা’ !! কি ! হেঁচকি উঠলো তো ? ...কিংবা পাড়ার দুই যমোজ বোনের নাম ‘ জেরক্স’  ! এই জেরক্সের ব্যাপারটা বুঝলেও  বাবার নাম মোনালিসা –এটা একটু দুর্বোধ্য ঠেকতে বাধ্য । ব্যাপার হচ্ছে –সিম্পল – বন্ধুর বাবার পার্মানেন্ট মুখভঙ্গিটা এমনই যে কিছু দাঁত সব সময়ে বেড়িয়ে থাকে ,হঠাৎ করে কেউ দেখলে বিভ্রান্ত হতে বাধ্য – উনি বুঝি হাসছেন ! কিন্তু ওনার এটাই গড়পরতা এক্সপ্রেসন ! – এই হাসি -হাসিনয় রহস্যময়তার জন্যই – মোনালিসা নামকরন । কে কবে এই যথার্ত নামকরন করেছিলো আজ আর মনে নেই ।  সব বাবাদেরই একটা করে গোপন নাম ছিলো যা একমাত্র বন্ধু মহলেই ব্যাবহার করা হতো । যেমন – ‘স্মার্ট বয়’ ‘উৎপল(দত্ত)’, ‘জেমস বন্ড’ , ‘অমরীশ পুরি’ , ‘দিলীপকুমার’, ‘নাকাবন্দি’ ...আরও কত । ছিলো বন্ধুদেরও নাম ,যেমন ‘আঁতলা (আঁতেল)’ ‘টাকলা’ ‘লেটুয়া(ল্যাটা)’ ‘কাতলা’ , ‘এল কে (লাথখোর)’... আরও কত কি ! সব কি আর মনে আছে ছাই । স্কুলে স্যারেদেরও বেশ কিছু নাম ছিলো বেশ জনপ্রিয় যথা ‘ব্রেকড্যান্স’(নেচে নেচে নানান অঙ্গভঙ্গী করে পড়াতেন বলে) বা ‘মুকেশ’(নাকি সুরে পড়াতেন বলে) **এখন হলে হয়তো ‘হিমেশ’ হতো !! না না! এসব নামকরন স্রেফ ফাজ

গ্রীষ্মযাপন

                                            মাথার ওপর সিলিংফ্যানটাকে কেউ যেন টেনে ধরেছে , ঘুরছেই না যেন ! কেমন মিন মিন করে পাক খাচ্ছে ! কিছুক্ষন পর ঠিক যা আন্দাজ করেছিলাম তাই – ‘ক্যাঁও ক্যাঁও ’ করে বিচিত্র আওয়াজ করে এবার একদম স্থির হয়ে গেলো পাখা ! সব্বোনাশ ! এদিকে গরমে বস্ত্র উন্মোচন কত্তে কত্তে অন্তিম বস্ত্রখন্ডটিতে এসে পড়েছি । এরপর আর যাওয়া যাবে না ,গেলে তা সভ্যতার পরিপন্থী হবে ব্যাপারটা । অগত্যা আমাদের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ( সধারনতঃ পুং) পোষাক বারমুডা নামক বিচিত্রদর্শন কটিবস্ত্রটি পরেই ছোটাছুটি – দৌড়া দৌড়ি লাঠি দিয়ে ,ঝুল ঝাড়া দিয়ে পাখাটার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলাম – কৃত্রিম উপায় ঘুরিয়ে দিয়ে অনেক সময় চলতে শুরু করে সেই আশায় । অনেকটা ঠেলে গাড়ি স্টার্ট করার মতো । কিন্তু নাঃ ,নট নড়ন চড়ন । এরকম অভিজ্ঞতা আপনাদের হয়েছে কিনা জানিনা ,তবে না হয়ে থাকলে আপনার ভাগ্য প্রসন্ন । এই যেমন সুন্দর করে গন্ধ-সাবান দিয়ে স্নান সেরে গরমে পরার উপযুক্ত হাল্কা রঙএর পোষাক গায়ে চাপিয়েছেন কি চাপাননি – দুর্যোগের মত পাওয়ার কাট ! ব্যাস , কুল কুল করে বিভিন্ন শারীরিক সোঁতা বেয়ে ঘামের ধারা নেমে আসতে শুরু করলো , এমন নয় যে